দল যদি আমাদের সমর্থন চায় আমরা দিবো- আকরাম
তাদের প্রতি বিষদগার করার সময় এখানো আসেনি- সাখাওয়াত
সৈয়দ মোহাম্মদ রিফাতঃ
দেশে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। তিনবার রাষ্ট্র পরিচালনা করা দলটি সর্বশেষ ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল আরও রাজনৈতিক দলের সাথে একীভুত হয়ে ১৮ দলীয় জোট গঠন করে। পরবর্তীতে আরও ২টি দলকে সাথে নিয়ে ২০ দলীয় জোট করে দলটি। জাতীয় নির্বাচনের সময় বিএনপির শরীক দলগুলো মনোনয়নের পেলেও নির্বাচনের পর তাদের আর দেখা যায়নি। যার ন্যায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জে ৫টি সংসদীয় আসনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ২টি আসন বাগিয়ে নেয় শরীকরা।
সে সময় ২০ দলীয় জোট থেকে নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনে প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমানের মোকাবেলায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মুফতী মনিরুল ইসলাম কাশেমীকে মনোনয়ন দেয়া হয়। অন্যদিকে নারায়নগঞ্জ- ৫ আসনে সাংসদ সেলিম ওসমানের বিপক্ষে ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় নাগরিক ঐক্যর উপদেষ্টা এস এম আকরামকে। অথচ দু’টি আসনের নারায়ণগঞ্জ-৫ তথা সদর-বন্দর আসনে সাবেক তিন বারের সংসদ সদস্য নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ও নারায়ণগঞ্জ- ৪ তথা ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিনকে মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত করা হয়। নির্বাচনে ভরাডুবির পর শরীক দল হিসেবে মনোনয়ন প্রাপ্তদের আর খোজঁ মেলেনি। এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া প্রায় ১৪ মাস যাবৎ কারাগারে থাকলেও নেত্রীর মুক্তির দাবীতে তাদের কখনোই মুখ খুলতে দেখা যায়নি।
রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে, বিএনপি’র মতো একটি বড় দলের সাথে তাদের জড়ানোটাই ছিলো দলটির সবচেয়ে বড় ভুল। বেশকিছু দিন ধরেই বিএনপি নামক দলটির সাথে শরীক দলগুলোর জোটগত কোনো তৎপরতা নেই। তা ছাড়া জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতও বেশ বেকায়দায়। তাই জোটবদ্ধ কর্মসূচিও দেওয়া হচ্ছে না। কোনো মিটিংও হচ্ছে না। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের অধিকাংশ শরিক দলের বেহাল অবস্থা। অধিকাংশ দল ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর। এসব দলের নিজের আলো নেই, বিএনপি-জামায়াতের আলোয় তারা আলোকিত। সংগঠনগুলো পুরোপুরি ব্যক্তিনির্ভর। জোটের বৈঠকেই শুধু দেখা মেলে তাদের। সরকার বিরোধী কোনো কর্মসূচি নিয়ে বা দলগতভাবে মাঠে দেখা মেলে না তাদের। জোটগুলো এখন অনেকটাই নিস্ক্রিয়।
এসকল বিষয়গুলোতে কিছু মন্তব্যর জন্য দৈনিক সংবাদচর্চা থেকে মুঠোফোন করা হয় মনির হোসাইন কাশেমীকে। তবে তার ফোন বন্ধ থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারার পর এখন পর্যন্ত বিএনপি নামক দলটির ক্ষেত্রে আপনার ভূমিকা কী? এমন প্রশ্ন করে নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এস এম আকরামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি তো বিএনপি করি নাহ্! বিএনপি প্রোগাম করবে কি করবে না সেটা আমার কি? ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছে আমি মনোনয়ন পেয়েছি, নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারি নাই। তবে দল যদি আমাদের সমর্থন চায় আমরা দিবো।
২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে জোটে বিএনপির শরিক হিসেবে ছিলো চার দলের বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ও ইসলামী ঐক্যজট। ২০১২ সালে নতুন যোগ দেয় লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ইসলামিক পার্টি, ন্যাপ ভাসানী, ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল) ও পিপলস লীগ। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল যোগ দিলে জোটটি ২০ দলীয় জোটে রুপান্তরিত হয়।
জোটের অন্যতম শরীক বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইদ আহমেদ। তিনি তার পার্টির সব তথা জোটেরও অন্যতম নেতা। এ দলের নেতা-কর্মীদেরও চোখে পড়ে না। নামসর্বস্ব দলের অফিসও কাগজে কলমে। নিজেদের কোনো কর্মসূচিও নেই। জোটের দিকে তাকিয়ে থাকেন তারা। অথচ এই সাঈদ আহমেদও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন।
দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে খালেদা জিয়া এখন জেল খাটছেন। তবে দেশের সকল স্তরের বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবী, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার হয়ে তাদের নেত্রীকে বিনা কারণে সরকার জেল খাটাচ্ছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি দেশের অলিখিত প্রধান বিরোধী দল হিসেবে তাদের অসংখ্যা নেতাকর্মী, সেই সাথে জোটগত দল থাকা সত্ত্বেও কাউকেই মুখ খুলতে দেখা যায়না। এছাড়াও গণতন্ত্র কিংবা সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট, দূর্ভোগ নিয়েও তাদের কখনো প্রতিবাদ করতে দেখা যায় না। আর মুখ খুললেও তা হয়তো মিডিয়ার সামনে নয়তো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।
দলীয় নেত্রীর মুক্তির ব্যাপরে শরীক দলের মুখ খোলার বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, নারায়ণগঞ্জে ঐক্যফ্রন্ট থেকে একটি আর ২০ দল থেকে একজন মনোনয়ন পেয়েছে। নির্বাচন হয়েছে গত ৩০ ডিসেম্বর। এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয়ভাবে জোটগত কোন কর্মসূচী দেয়া হয়নি। সামনে যদি বড় ধরনের কর্মসূচী দেয়া হয় ওইসময় দেখার বিষয় যে তারা থাকে কিনা। তাদের প্রতি বিষদগার করার সময় এখানো আসেনি। আমরা আশা করি সামনে নেত্রীর মুক্তির দাবীতে তারাও রাজপথে থাকবে।
সচেতন মহলের মতে, ২০ দলীয় জোটের সব পর্যায়ের নেতারা যদি একত্রে মূল দলের নেতাকর্মীদের সাথে থেকে তাদের সহযোগীতা করে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে থাকতো তাহলে তাদের মধ্যে পরিবর্তন আনা সম্ভব ছিলো। কিন্তু এতো বড় জোট থাকা সত্ত্বেও ওই জোটের কোন নেতাকর্মীদের দলীয় কর্মসূচী কিংবা এর বাইরে মাঠে দেখা যায় না। তাদের মতে, মূল দলের নেতাকর্মীরাই দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে জোটের নেতাকর্মীদের আর কি করার।এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। অনেকে বিএনপি হুমকি দিচ্ছে জোট ছাড়ার জন্য।